সোমনাথ বাবু বেশ ভালো একটি সরকারি চাকরি করায়, স্ত্রী নমিতা দেবী ও তিন সন্তানকে নিয়ে বেশ সুখেই ছিলেন। সচ্ছল অবস্থা, পিতা মাতা ভক্ত বাধ্য তিন সন্তানকে নিয়ে তাঁর বেশ সুখের সংসার। পিতা মাতার কাছে তাঁদের সব সন্তানই সমান প্রিয় বা আদরের, কথাটা যতই শোনা বা পড়া যাক না কেন, বাস্তবে কিন্তু দেখা যায়, কোন একজন সন্তানের প্রতি স্নেহ ভালবাসার মাত্রাটা একটু অধিকই হয়ে থাকে। সাধারণত জ্যেষ্ঠ বা কনিষ্ঠ সন্তানের কপালেই এই প্রাপ্তিযোগ ঘটে থাকে। আবার নিক্তিতে পরিমাপ করলে এক সন্তানের প্রতি পিতার, ও অপর কোন এক সন্তানের প্রতি মাতার স্নেহ ভালবাসার পাল্লাটা একটু ভারী, এই ঘটনারও অভাব দেখা যায় না।
সোমনাথ বাবু ও নমিতা দেবী, উভয়ের ক্ষেত্রেই সন্তান স্নেহের লক্ষণটা যে প্রথম প্রকারের ছিলো, এটা বোঝার জন্য কোন দাঁড়িপাল্লার প্রয়োজন হতো না। তাঁদের উভয়েরই স্নেহ ভালবাসার ভাগটা অনেকটা, ছেলেবেলায় কষা অঙ্কের সেই চোদ্দটা লজেন্স তিন পুত্রের মধ্যে এমনভাবে ভাগ করিয়া দাও, যাতে কনিষ্ঠ পুত্র দুইটি লজেন্স অধিক পায় জাতীয় ছিলো। এক্ষেত্রে সেটা যে শুধু কনিষ্ঠ সন্তান হওয়ার সুবাদে, তা কিন্তু নয়। ছোটবেলা থেকেই এই পুত্রটির পিতা মাতার প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধার পরিমাণ একটু বেশি ও অস্বাভাবিক ছিলো। দিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার ছাড়া, সকালে ঘুম থেকে উঠেই পিতা মাতাকে প্রাতঃপ্রণাম করে পায়ের ধুলো না নিয়ে সে কোন কাজ তো দূরের কথা, প্রাতরাশ পর্যন্ত করতো না। ব্যাপারটা অনেকের কাছে একটু অস্বাভাবিক বা বাড়াবাড়ি মনে হলেও, পিতা মাতার কাছে অত্যন্ত স্বাভাবিক ও গর্বের বিষয় ছিলো। ফলে দিনের মধ্যে বেশ কয়েকবার ছোট ছেলের হাতের স্পর্শ পিতা মাতার চরণে, ও পিতা মাতার হাতের স্পর্শ ছোট ছেলের মাথায়, একটা নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার ছিলো।
দিন যায়। ধীরে ধীরে প্রথামাফিক একদিন সোমনাথ বাবু চাকরি থেকে অবসরও নেন। আজও তাঁর সেই সংসার আছে, আছে তিন সন্তানও। তবে যুগের হাওয়ায়, সন্তানদের মধ্যে পূর্বের সেই সুসম্পর্ক আর চোখে পড়ে না। ছোট ছেলে একটু অধিক নেশাগ্রস্ত হয়ে বাড়ি ফিরলেও, তার কিন্তু পিতা মাতার ওপর ভক্তি শ্রদ্ধা এতটুকু হ্রাস পায়নি। আগের মতো পিতা মাতার হাতের স্পর্শ তার মাথায় প্রাত্যহিক না পড়লেও, নেশাগ্রস্ত ছোট ছেলের হাতের স্পর্শ কিন্তু পিতা মাতা এখনও মাঝেমধ্যেই পেয়ে থাকেন, তবে সেটা গতি ও স্থান পরিবর্তন করে পায়ের পরিবর্তে গালে।
সুবীর কুমার রায়
১৪-০৯-২০২১
