বাইবেল চর্চা (স্মৃতির পাতা থেকে) {লেখাটি Pratilipi Bengali, বাংলায় লিখুন, উইপোকার কলম, ছোটোবেলাতেই ভালো ছিলাম, ও বইপোকার কলম পত্রিকায় প্রকাশিত}

DSCN9767এখনও আগের মতো আছে কী না জানিনা, তবে স্কুল জীবনে দেখেছি চিঠি লিখলে বিভিন্ন চার্চ বা খ্রীষ্টান ধর্মীয় সংস্থা থেকে বাইবেল সংক্রান্ত বই পাঠানো হতো। কলকাতার কোন খ্রীষ্টান প্রতিষ্ঠানে চিঠি লেখার ফলে আমার কাছে বিভিন্ন পত্রিকা ও বই পাঠানো শুরু হলো। প্রথম প্রথম পোস্টে ঐ সব বই বা পত্রিকা আসার আশায়, পিওনের পথ চেয়ে থাকতাম। তারপর এক সময় দেখলাম কলকাতা তো বটেই, বোম্বে বা মাদ্রাজ থেকেও বিভিন্ন বই আসা শুরু হলো। এরা আবার বই এর সাথে বাইবেল বা যীশু সংক্র্রান্ত প্র্রশ্নপত্রও পাঠাতো। ডাকযোগে পরীক্ষার মতো সেই সব প্রশ্নের উত্তরও ডাকযোগে তাদের পাঠাতে হতো। প্রশ্নগুলোও অদ্ভুত, আগাগোড়া বইটা তারা না পড়িয়ে ছাড়বে না। যেমন, এই বইতে যীশু শব্দটি কতবার আছে? যীশু শব্দটি কতবার আছে গুনে দেখতে গেলে, মোটামুটি যত্ন নিয়েই গোটা বইটার ওপর চোখ বোলাতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পরে সার্টিফিকেট আসতো। আমি অনেকগুলো সার্টিফিকেট পেয়েছিলাম। স্কুলের পরীক্ষায় যত খারাপ রেজাল্টই করি না কেন, বাইবেল-এ ৯৮ থেকে ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়ে, পরিবারের মুখ যথেষ্টই উজ্জল করেছিলাম।

সে যাহোক্, এই সব প্রতিষ্ঠান মাঝে মাঝেই কিছু কার্ড পাঠিয়ে আমার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজন, যারা এই সব বই পড়তে চায়, পরীক্ষা দিয়ে নিজেদের ধন্য করতে চায়, তাদের দিতে বলতো। আগ্রহী ব্যক্তিরা এই কার্ডে তাদের নাম, ঠিকানা লিখে ঐ প্রতিষ্ঠানে পাঠালে, তারাও আমার মতো বইপত্র, প্রশ্নপত্র পেতে শুরু করবে। এই কার্ড পোস্টে পাঠাবার জন্য কিন্তু কোন ডাকটিকিট লাগাতে হতো না। আমি এইসব কার্ডে আমার পরিচিত বন্ধু বান্ধবের নাম ঠিকানা লিখে পোস্ট্ করে দিতাম। তার মধ্যে একাধিকবার পন্ডিত স্যারের নাম ঠিকানা লিখেও পোস্ট করে দিয়েছিলাম। গোঁড়া ব্রাহ্মণ পন্ডিত স্যার নিশ্চই বাইবেল, অন্যান্য বই বা প্রশ্নপত্র পেতে শুরু করেছিলেন। গীতা, উপনিষদের পরিবর্তে বাইবেল বা ঐ জাতীয় বই পেয়ে তাঁর মনের অবস্থা কী হয়েছিল, কেষ্টর বাণীর পরিবর্তে খ্রীষ্টর বাণী পড়ে তাঁর কেমন লেগেছিল, জানার খুব ইচ্ছা থাকলেও, জানার সুযোগ বা সাহস কোনটাই হয়নি।

সুবীর কুমার রায়।

১১-০৫-২০১৬

 

Leave a comment